রাকিবুল হাসান, মনপুরা প্রতিনিধি: ১৯ মাস বয়সী শিশু জুবায়ের। যে বয়সে হাসি-খুশি কান্নাকাটি, খুনসুঁটিতে মেতে থাকার কথা সেই সময় শিশুটির দিনরাত কাটে কান্নাকাটি করে। জীবনের শুরুর সময় সামান্য এ বয়সে শিশুটিকে একাধিকবার ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে।
ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এর দক্ষিণ সাকুচিয়া গ্রামের রিসক্সা চালক রাসেদের ছেলে জুবায়ের জন্মগ্রহণ কররা সময় দাত্রী অবহেলা তার একটা পা ভেঙ্গে যায়। কখনো পায়ের ব্যথা, আবার কখনো পায়ের ব্যথার যন্ত্রণা হাসপাতালের বিছানা এখন নিত্যসঙ্গী এই শিশুর।
উন্নত চিকিৎসা এবং অপারেশন ছাড়া সুস্থ হওয়া সম্ভব নয় জুবায়ের। এর জন্য বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন। রিসক্সা চালক ও দিনমজুর বাবার পক্ষে ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সম্প্রতি জুবায়ের অসুস্থ হলে মা ফাতেমা তার শেষ সম্বল কানের দুল বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন।
ছেলের চিন্তায় এখন দিশেহারা অসহায় বাবা-মা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,রিসক্সা চালিয়ে ও দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালান রাসেদ। দুই সন্তানের মধ্যে জুবায়ের ছোট। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে টেনেটুনে সংসার চললেও সুখের অভাব ছিল না পরিবারে।
কিন্তু জুবায়ের জন্মগ্রহণ কররা পর থেকে অসুস্থ হয় সে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে যতদিন গড়িয়েছে জুবায়ের ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত জুবায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় চার লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
জন্মগ্রহণ কররা পর শিশু জুবায়কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে জুবায়ের জন্মগ্রহণ কররা সময় দাত্রী অবহেলা তার একটা পা ভেঙ্গে যায়। তাই জুবায়ের অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
পরিবারের সামর্থ অনুয়ায়ী পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা করান অসহায় পরিবার।এখন শিশু জুবায়কে উন্নত চিকিৎসা এবং অপারেশনের পরামর্শ দেন। এদিকে অসহায় এই পরিবারের কাছে অপারেশন তো দূরের কথা মনপুরা থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার টাকাই নেই।
করুণ চাহনিতে ছেলের যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করছেন জুবায়ের বাবা-মা। কান্নাজড়িত কন্ঠে মা ফাতেমা সময়ের আলোকে বলেন, যখন পায়ের ব্যথা শুরু হয়, তখন মনে হয় ছেলে মারা যাবে। ওই সময় কোনো দিশা না পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে যাই আমি।
মন চায় আমার পা দিয়ে দেয় ছেলেকে, তবুও বাঁচুক আমার ছেলের। আমার শেষ সম্বল কানের দুলটা পর্যন্ত বিক্রি করেছি ছেলের চিকিৎসায়। আমাদের আর কোনো সম্বল নেই।সমাজের অনেক লোক আছে যাদের একটু সহযোগিতা আমার এই নিশপাপ শিশুটা পরিপূর্ণ সুস্থা ফিরে আসবে।
এখন জুবায়েরকে সুস্থ করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানান জুবায়ের মা। এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবসিক মেডিকেল অফিসার ডা.রাসেল আহমেদ বলেন, জুবায়ের নামের ওই শিশুর চিকিৎসার কাগজপত্র এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে যা মনে হয়েছে,
তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া এই চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। ৪নং দক্ষিণ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাকসুদুর রহমান মজনু বলেন, রাসেদের পরিবারটি খুবই অসহায়।তার সন্তান জুবায়ের জন্মগ্রহণ করার সময় দাত্রী অবহেলা একটি পা ভেঙ্গে যায়।
যাহা এখন অপারেশন এর মাধ্যমে ভালো করার সম্ভব। অপারেশন করার মত সেই সামর্থ্য নাই এই পরিবারের। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো শিশুটি সুচিকিৎসা পেতো। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান,৬ টি রোগ এর উপর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অনুদান প্রদান করা হয়।
কিন্তু জুবায়ের সেই আওয়তা আসছে না।তাই তাকে অনুদান প্রদান করা সম্ভব না।তবে হাসপাতালে সমাজসেবা বিভাগ থেকে শিশু জুবায়ের ঔষধ ও বিভিন্ন সহযোগিতা করা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।